মেজর রাশেদের ফ্লিম টিমের সদস্য সিফাত, সিপ্রা, রিফাত কে কোথায়

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে নেওয়া মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান একটি ডকুমেন্টারি ফ্লিম তৈরি করতে আরো ৩ সদস্য সহ গত ৩ জুলাই কক্সবাজার এসেছিলেন। তার টিমের অপর ৩ সদস্য হলেন-ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লিম এন্ড মিডিয়া বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাহেদুল ইসলাম সিফাত, একই বর্ষের ছাত্রী শিপ্রা রানী দেবনাথ ও একই বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র তাহসিন রিফাত নুর। মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান ডকুমেন্টারি ফ্লিমটির প্রযোজক ছিলেন। ইউটিউবে দেওয়ার জন্য ‘জাস্ট গো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ডকুমেন্টারি ফ্লিমটি তৈরির কাজ চলছিলো।

মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান নিহত হওয়া নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মোট ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। তারমধ্যে, মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সাথে তাঁর প্রাইভেট কারে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত’কে আসামী করে টেকনাফ থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়। তার একটি ২০১৮ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং অপরটি সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে।

মামলা ২ টির নম্বর হলো : জিআর ৫৯৫/২০২০ ও জিআর ৫৯৬/২০২০ ইংরেজি। গত ১ আগস্ট দায়েরকৃত মামলা ২টির বাদি হন-বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই (নিরস্ত্র) নন্দ দুলাল রক্ষিত। যে নন্দ দুলাল রক্ষিত মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এর করা হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামী।

গত ১ আগস্ট মামলা ২ টিতে সাহেদুল ইসলাম সিফাত’কে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। তখন থেকে সাহেদুল ইসলাম সিফাত কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। ফ্রীল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসাবে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বেশ সুনাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা সহপাঠীরা।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯ টার দিকে যখন মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে খুন হন, তখন তাদের ডকুমেন্টারি ফ্লিম তৈরির টিমের অপর ২ সদস্য যথাক্রমে ঢাকার স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর ছিলেন-হিমছড়ি ‘নীলিমা রিসোর্ট’ নামক একটি কটেজে। হিমছড়ি এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে রামু উপজেলাতে হওয়ায় রামু থানার হিমছড়ি ফাঁড়ির পুলিশ খুনের ঘটনার পর পরই এসে শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর’কে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার করে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী নীলিমা রিসোর্ট থেকে ৫টি বিদেশি মদের বোতল, ১ লি: বাংলা মদ ও এক পোটলা গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

গত ৩১ আগস্ট রাত্রে শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর’কে গ্রেপ্তার করার পর পরই তাদের রামু থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাহসিন রিফাত নুর’কে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আর উদ্ধারকৃত মালামাল গুলো সহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় একটি মামলা রুজু করে শিপ্রা রানী দেব’কে গত ১ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। মামলা নং জিআর ৩১১/২০২০ ইংরেজি (রামু)। একই সাথে মামলার আইও রামু থানার এসআই দীপংকর আসামি শিপ্রা রানী দেবের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত গত ৫ আগস্ট রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আদালতে রিমান্ড আবেদনটির কোন শুনানি হয়নি। শিপ্রা রানী দেবনাথ তখন থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে।

ঢাকার স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটি সুত্র জানা গেছে, শিপ্রা রানী দেবনাথ গত ৮ দিন আগেও অনলাইনে বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়েছে। ফটোগ্রাফার হিসাবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার হাজারাহাটি গ্রামের নব কুমার দেবনাথ এর কন্যা শিপ্রা রানী দেবনাথ। নব কুমার দেবনাথ বিজিবি’র একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। শিপ্রা রানী দেবনাথ ২ ভাই বোনের মধ্যে বড়।

মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান সহ তার টিমের ৪ সদস্য গত ৫ জুলাই কক্সবাজার পৌরসভার মাধ্যমে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে করোনার নমুনা টেস্ট করান। টেস্টে তাদের সকলের রিপোর্টও ‘নেগেটিভ’ আসে।